রহমান জর্জির কবিতা


আমি খেলা দেখিনি। কারণ, আমি খেলা দেখি না। ভীমরতি নিয়ে খেলা করে লবনাক্ত শীত। অথচ তার সবটুকু উষ্ণতা চেঁটেপুটে খায় দক্ষিণদ্বারের বালক। হরিদ্রাভ সোলাসে প্রেতাত্মার শরীর বুনে যায় লিকলিকে লেহন। কোথাও কোন মৃত্তিকা নেই। মৃত্তিকার প্রসব যন্ত্রণা নেই। সুপ্রিয়া মেঘ উড়ে যায় ধবল কার্তিকের কাছে। বহমানের জমাট রক্তের ধূসরে বিনম্রতা শেখে মাঘীর ক্ষুদ্রান্ত্র। দুর্বিনীত চাতকের চোখে অপাঠ্য হয়ে উঠে ওপারের পুরাণ। অস্থি-মজ্জার কংক্রিটে শুধু বিভীষিকা উড়ে। ডানাগুলো খসে পড়ে জিবরাঈলের সিনায়।
আমি খেলা দেখিনি। কারণ, আমি খেলা দেখতে জানিনা।


ভয় পাবেন না দাদা। আমি চুরি করতে আসিনি। এসেছি নতজানু হয়ে ভিক্ষে চাইতে। এক ঘটি সামুদ্রিক জল। রণক্ষেত্রে পরাজিত অথবা ধরাশায়ী  একজন যেমনটি চায় শত্রুর কাছে। আমার বর্ধিষ্ণু শৈশব, কৈশরের আলোকচিত্র আমাকে কোনদিন নগ্ন করেনি জীবনের কাছে। নতজানু হতে শেখায়নি বৃত্তির ছায়াতটে; প্রস্তরঘাটে। গুহ্যদ্বারে এসে রোজ ফিরে যায় উন্মুক্ত হন্তারকেরা। শূন্য করতলে নয় বরং মুখভর্তি জমাট রক্ত উল্লাসে। তাদের ছেদন দন্তে চিড়িক মারে শোধিত দানা। জীবানু সকল নেচে উঠে  আত্মহত্যার উৎসবে। আনন্দ আর উলম্ব মাদকতায়। অসহ্য যন্ত্রণায় ভয়ানক হয়ে ওঠি আমি আর আমার বিনম্র সম্মানেরা। আত্মঘাতি হয়ে উঠি ক্রমশ লোভ এবং ঘৃনায়। জোনাকিদের অতৃপ্ত কলমে মহামান্য হয়ে উঠে আমার লুপ্ত যৌবন, দু’বাহুতে মিশে থাকা অস্তিত্ত্বের সহায়। অশ্রুতে স্নান দেই পূণ্যের শোক। আমার নোংরা পায়ের নিচে লুটোপুটি খেলে যায় মৃত্যুঘড়ি, সৃষ্টিত দেবতাদের সকল  পৌরাণিক ধাঁধাঁ। মায়ের পেটে ভ্রুণ হয়েই চলতে শিখেছি। নড়বড়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে সেই থেকে চলছি তো চলছিই। তবে কেন  আছড়ে পড়ি মৃতদের দরজায়।
দাদা, চুরি করতে আসিনি। হালাল কাফনের সন্ধানে এসেছি।


শুনুন! না হয় একটু দাঁড়িয়েই গেলেন। আপনাকে মুখস্ত করা হয়ে গেলেই ছেড়ে দেব। একটুও কালপেন হবে না। কথা দিয়ে দিলাম দেখলেনই তো। মানুষ খুবই অদ্ভুত কিসিমের লোক তাই না। কি বললেন- জানতেন! হেহ হে হে…এই যে দেখলেন- আপনিও কি অদ্ভুত কিসিমের। হেহ হে হে… শরীরের লবন খেয়েছেন কখনো অথবা মানচিত্র। মজার বিষয় কি শুনবেন- মানচিত্র খেতে খেতে এতদূর বয়স হল। এখন এ মুহূর্তে আপনাকেও আমার একটি দুর্লভ মানচিত্র বলে মনে হচ্ছে। ছি: অসভ্য বললেন! আপনার নাম যদি বাংলাদেশ হয় তাহলে খুব সম্ভবত: আপনি একজন নারী। আপনার নাভিটাকে একটু ছুঁতে দেবেন প্লিজ! ছি: ছি: আবারও অসভ্য বললেন! আপনার বিনির্মানের নাভিতে ঠিকই তো পালেন লম্পটের শহর। আর পূণ্যের শোকে অসভ্য হব আমি?

ও কি চলে যাচ্ছেন যে কিছু না বলেই! ছি: আপনাকে যে এখনও মুখস্ত করতে পারিনি। এই বুড়ো বয়সে মা আজ আমায় বকবেন।

শুনুন! যাবেন যখন আমার চোখ দু’টি নিয়েই যান না। বিনিময়ে নাভিটা না হয় দিয়েই গেলেন। সারারাত বসে বসে মানচিত্র খাব…

আমার হাসতে বারণ ছিল। তবুও সহস্রবার হেসে ফেলেছি তাই না। মাফ চাইছি। এবং এই জন্যই আমাকে আপনার মা করতে হবে। হাসতে চাইনি। কারণ, আমার দীপ্তিহীন মুখের মতোই পৃথিবীর চেহারাটা। বুদ্ধিদীপ্ত অথচ গম্ভীর। নিকটস্থ মানুষগুলো আমাকে বোকা ভাবে। আমি মজার ঠোঁটে লেহন করতে থাকি। তারা ভাবে। ভাবি আমিও। সারা দেহে অসুস্থ যৌনাঙ্গের চিহ্ন নিয়ে  কতসুখেই না জানি আছে তারা। কাপালিক অন্তরালের পথ চৈত্রের জমিনের মত খাঁ খাঁ করে। নির্মাণের সৃষ্টিশীল পথে একটি বিনির্মাণের কুমীর; হরিয়ালের প্রজাতি [বিপণ্ন] অভিমুখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রোজ হারিয়ে যায় অসীমের প্রতি অবাক শূণ্যতায়। চিরহরিৎ বৃক্ষেরা ঝরাতে থাকে একেকটি নিষ্পাপ পাতা। আমি কথা বলতে জানি না। তাই না! সে জন্য হলেও আমাকে আপনার মা করে দিতে হবে।

চারদিকে বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবী। ঘোরাঘুরি করে কত শত মানুষ।রক্ত মাংসের সংজ্ঞাধারী সৌন্দযের্র বিচিত্র জংঘা সকল। অথচ, একটি নিকটবর্তী জানালাকেই খুব বেশি ভালবাসতাম আমি। যখন তখন তাকালেই  দেখতে পেতাম আমার ভেতরেরও ভেতর এবং বাহিরের অদৃশ্যময়তা। আত্মভোলা ইট-পাথরের দেয়ালে বন্দি হয়ে আছে আমার চূন-সুড়কির মহামাণ্য জীবন। সারা শরীরে কালো কালো রক্তের গোর। নগ্নতার ভেতরও কত রকম নগ্নতা দৃশ্যমান। একটি মেয়েলী রান ঝুলে আছে মৃত্যুর এপিটাফে। প্রতিটি রোমকূপ জমে আছে বরফের মত ঘৃণা আর মনোক্রমিক বিভীষিকায়। পৃথিবীর কাউকেই সম্ভবত: ভালবাসা যাবে না। প্রজ্ঞার কারিগর এ্যাপোলো মূর্তির নান্দনিকতাকেও হয়তো না। কারণ, আমার মনে হয় কেবল এই জানালাটিকেই সত্যিকার অর্থে ভালবাসা যায়। চাঁদ এবং তত: পরবতী বৈপরীত্বের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে জানতে পারা শুধুমাত্র একটি জানালার ধারেই সম্ভব। সম্ভব হলে বৃহদান্ত্র ভর্তি ধোঁয়ার মিছিলে একটি শূণ্য করতলও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে সেখানে। জীবনমুখী কারুচিত্রগুলো পড়ে আছে নির্জীব সেলুলয়েডের প্রান্তিক নৈসর্গে। অথচ সমান্তরাল মানচিত্র, নাভিশ্বাসের আশ্রয় হারাতে থাকে চেনা ঠিকানা। অনির্বাণ নি:শব্দের গুহায়…

প্রিয় ভালবাসা। তোমাকে দেবার মতো একখন্ড পোড়া জমিন ছিল। এই বুকের উনুনে, কষ্টের জিহবাকে সমূলে চিড়ে সেই জমিনের জন্ম। অথচ, তার উপরে এখন ঘু ঘু চরায় সর্বনাশের বালক মহাশয়। অভিশপ্ত হয়ে পড়ে আছে সুপ্রাচীন যৌবন। রোজ এসে অস্থি খোঁড়ে সেখানে একটি শ্বাসরুদ্ব অক্স-বো। মাটির মতো বুনট পাল্টাতে পাল্টাতে এক সময় কাদা হয়ে যাই ধর্মান্ধ পথে। সূচীভূক্ত ঠিকানারা উবে যেতে থাকে নিযুক্ত কালির মৃত্যু শোকে।  মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে আছি আমি । মৃত্যু আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত কিন্তু মেরে যেতে পারছে না। অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে যতি সুদীর্ঘ সমকালীন। অযুত আর্তির সম্মুখে  উন্মুক্ত একটি নাঙ্গা তরোয়ার। আর তার শীর্ষদেশে জ্বলে সংখ্যাবিহীন অগ্নি; নর্কের কিন্নরী- হাওয়া বেগম। গোয়ায় মারছে ধূর্ত পুলিশ।

…পদগমণে অস্থির…বিশাল পথ…শ্রমসাধ্য লোকেশন…বিভ্রান্তিতে আছি…বহুকষ্টে প্রাপ্তি…একটি শিশু…অদ্ভুত শিশু…ব্যাপক শিশু…বসা দরকার…বসব কি…বোসেন্ না…পুনরায় অস্থির…হঠাৎ আগমন…তীরবিদ্ধ কারিগর…অসহ্য সৌন্দর্য…ভয়ংকর নিষ্পাপতা…গোবরে পদ্মফুল…তন্ময় আমি…লেফট্ ইনসাইড..জাতিস্মর হলাম…উচ্চারনে অনিকেত…আমার বাবা…তার দাদা…ঝামেলা আছে…তবে ছোট্ট…অনেকটাই সহজ…পেয়েছি সমাধান…মেজাজ ঝাপসা…বাধ্যগত বিদায়…ফিরতে চাই…নিষ্পাপ কবরে…ফুটের উপর…বিড়ি ফুঁকছি…ধোঁয়ারা কই…পদগমণে অস্থির…

একটি জলের সংসার কাঁধে
আমরা বেঁচে থাকি নিত্য শরীরের দামে।

আবেগকে পিষ্ট করে বাঁচি রোজ
অযুত রাত্রির বিবস্র হাতুড়ির নিচে।

আমিও বেঁচে থাকি
আবুলদের যান্ত্রিক সময়ে
বিবেকে হেমারডজ্ পালতে পালতে…

রোবটিক প্রেমের ভেতর ঘুমিয়ে থাকেন নিত্য
আমাদের দু:খী অথচ সর্বজান্তা ভগবান।

টেবিলের উপর পড়ে থাকে বেবাক
দলিত-মথিত  উত্তরাধিকার;
বস্রহীন চার্বাক দর্শন
অথবা দিগম্ভর মহাত্মণ সর্বস্ব।

একটি মাত্র অবতার প্রাপ্তিতে নিশ্চিন্ত
অপরিচিত সব স্বর্ণপথে
হেঁটে যায় বিধ্বস্ত যুবক;
নর্কের শিবিরে তাবু খাঁটা
সমকামী সৈন্যের উদ্যত বেকার দল।

অথচ তোমার নির্বিকার পদধূলোয়
একেকটা লাশ হয়ে ফেরে জ্যন্ত
দিনের কর্ণেল কবরে…

১০

দিনের ভিখিরি আলোক শেষ হয়ে এলে
রাতের বেহায়া গর্ভে সশব্দে কাস্তে চালায় অন্ধকার
ঈশানের বুক চিড়ে ফুঁটে উঠে দুর্ভিরে ছায়াচিত্র
পিত: এবং একটি প্রোজ্জ্বলিত বোধের চিহ্ন।
দৈববাণী হয় মাটির আস্তিন ভেঙ্গে
আসছে সর্বনাশ…
পান্ডিত্যের সিনায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলে
তুমিও প্রস্তুত থেকো।

১১

অস্থিসার কোটরের ভেতর একজোড়া জ্বলমলে চোখ
বর্ণান্ধ হয়ে পড়ে অসম্ভব হঠাৎ
ধূসর স্কেলে মাপে জাগতিক প্রতিবিম্ব।

চেনাজানা মুখগুলো সব হয়ে উঠে অচেনা
সম্মোহিত কবরের ফ্যাসিমাইল।

১২

এই আমি চিরকালই মূর্খ থেকেছি
তাই সহোৎসাহে গ্রহণ করে নিয়ে ছিলাম
যা কিছু প্রাকৃতিক, আদম সৃষ্ট যন্ত্রনার স্তন
পবিত্র জলে গিলে খেয়েছি কত নর্দমার সম্বল।

তবুও জীবনের পদ্যে
আজও আমি রসাতলবাসী
জোছনার দু:খী আলোকের শীষে
লিখে চলি অধিজৈবিক বন্ধুরতা যত;

অথবা সমান্তরাল মগজে
আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য
সেন্ট ইরিবাস…

১৩

ঘুমাও মানবী…
তুমিও ঘুমাও কালস্বপ্নের ঘোরে যত্তটি পার
তবে নির্জন; নি:সঙ্গ
মৃতের মতো মাটিটি হয়ো না।
তন্দ্রা চোখে তাকিয়ো না সুন্দরের পানে।

দৃষ্টির প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে
সুপ্রাচীন দাবদাহে মাতো অবিশ্বাসীনি;
অন্ধকারের ভেতর জ্বালাও অনন্তের দিশা
সন্দেহের এস্তেঞ্জা সেরে দেখে যাও মানুষ
বড় বেশি পবিত্র হয়ে আছি।

অতিমানব নই তোমাদের যান্ত্রিকতার ভেতর
তবুও নিজেকে মৃত্যুঞ্জয় ভাবি।  

১৪

আমাকে আবারও ফিরতে হল। একান্ত অনিচ্ছাতেই। তোমাদের অবরুদ্ব শহরে। আবর্জনার দেয়াল ঘেরা প্রাচীন প্রতিহিংসার কাছে। কেবল একটি মমতা বৃরে ছায়াচলে বসব বলে। কুড়িয়ে নেব বলে গোনা কয়েক নিকৃষ্ট বীজ। সম্ভাব্যতার আশ্রিতা নীল চোখা মেঘ। দুরত্বে গন্তব্য খুঁজে পায় একজন প্রগতির পরিব্রাজক- পঙ্গপালের অন্নদাতা মাড়োয়াড়ি সূর। বৈরুত থেকে বুদাপেষ্ট। চোরাবালির দেশ থেকে নিমজ্জিত কলডেরা। সুন্দর আর অসুন্দরের অদ্ভুত মিশেঁলে গড়া মৃত্তিকার প্রথম অন্ধকার। পাতালের দেশ। স্থির নিয়তির সন্ধানে ছুটিয়ে ফিরেছি জাতশুদ্ধ ঘোড়া। সহোদরের স্বপ্নালু পঙ্খিরাজ। বড় শ্রান্ত হয়েই ফিরেছি মাটি। আচঁলের সবটুকু ঘামের বিনিময়ে এবার আমাকে গ্রহণ কর। তোমার স্তনে জমে থাকা বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ যত্ত; আমাতে সেঁটে দাও। হাহাকার চুষে নিয়ে আমি হই পিতৃত্বের জেসাস্। মেঠো কাদার ভেতর বুনে দেই আত্মভোলা জরায়ূ। অথচ উপরস্থ ভগবান দেখে যাবেন শুণ্যতর আফিস।

আমি ফিরতে চাই নি মাটি। তাই আমাকে ফিরতেই হল।

১৫

আবারও সেই ভুলটিই করলাম। নিজের দরজা খোলা রেখে টোকা মারলাম অন্যের দরজায়। এ্যানোম্যালিক অন্ত:সত্ত্বা হারেমে। সামাণ্য কিছু ভাবনা নিয়েই ছাপ্পা ঘুড্ডির মত ঘোত্বা খেয়ে যাই। অথচ এর চেয়েও কত বেশি ভাবনা নিয়ে মানুষ কাটিয়ে দেয় ঢেড় নানাবিধ প্রোটিন যৌবন। বড় আধ্যাত্মিক হতে চেয়ে ছিলাম। গুজব রটতে শুরু করল- আমি নাকি মারফতি লাইনের লোক। অন্ধ বাদুড়ঁও নাকি বদলায় সংরাগের গতিপথ। আর আমি বদলাতে গেলেই দুধের ভেতর নুন। বারুদ দিয়ে পান্তা ভাত। যদিও তা সমান্তরাল কিন্তু কিছুটা তীর্যক ডিগ্রি আছে।
 
কেবল এবং কেবল যদি একটি কাকঁড়া হতে পারতাম। একটি সোনালী কাকঁড়া। কাকঁড়া দিয়ে রক্তের রেজালা আপ্যায়ন দিতাম সকল সভ্য সমাজের প্রতি। অথবা লবনাক্ত সমুদ্দুরের ভেতর আণবিক ডুবুরী হতে চাইতাম। তুলে আনতাম দারিদ্রতার মুমূর্ষু কফিন। ধান্ধা আর ফিকিরে কাটিয়ে দিতাম আমার ইতরিক অণুযাপন।

আমার সবকটি জানালা জুড়ে এখন ঝাপসার দোকান। নানাধারে জ্যোতিষ রাষ্ট্রের লোক। ক্রেতা হয়ে আছে শুধু সকল মানবিক।  

১৬

ঔখানে নিমগ্ন দৃষ্টির বিভাজিত অন্ধকারে
নিশ্চিন্তিপুর গ্রাম ছেড়ে জেগে উঠে একটি বধির বৃক্ষ;
বালির আশ্রিত ছায়াতলে আদিম প্রস্তরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায়
একটি কংকাল অভিযোগ মৃত্যুর বাটালি হাতে
খোদাই করতে করতে কাটিয়ে দেয় কতগুলো পৌরানিক বছর।
অথচ বংশলতিকার রেখা আর স্পষ্ট হয়ে ওঠে না…

পলাতক ইকারুস আর একজন প্রেতাত্মার জননী
সটান হয়ে শুয়ে পড়ে অর্ধনগ্ন
একটি ধর্ষিত রক্তশেঁকড়ের লোভে।
হায় অভিশপ্ত বৃক্ষ, মৃত্তিকার জারজ সন্তান !!
এবার কি করে ঠেকাবে তুমি দৃশ্যমান পাপ
জোটবন্দী পাপেরা কি হটিয়ে দেবে পিতৃহীন পূণ্য?

তবে এসো ফের তুলে নেই মুদ্রিত নিশান
বালি ঢাকা ঘাসের শেষে উৎসবরত লাশেদের মিছিলে;
হাহাকার আর আর্তিগুলোকে সমাবেত করি
ঈশ্বরের ভাল-মন্দ অনাথ আশ্রমে
নির্জনতার সিদ্বহস্ত কোন এক প্রান্তিক কোণে।
নিষ্ঠুরতা বলে পৃথিবীতে কিছু নেই…

১৭

একটি নির্ঝরের কাছে সূর্যাস্তের বরাত দিয়ে চিঠি লিখেছিলাম।
আমি লিখেছিলাম-
তোমাদের প্রতিটি দিকে আজ নিষিদ্ব ভয়াবহতা
রক্তস্রোতা নদী বয়ে যায় গলাকাটা রক্তোল্লাসে
পরিচিত বীজেরা নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে প্রাক-বয়স্ক কালে
উলম্ব ফসল কেটে নেয় পোড়া জমিনের নিরামিষ জিহবা।
আমি লিখেছিলাম। কারণ-
একটি দুর্ভিক্ষ প্রবণ কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অত্যন্ত প্রিয় ছিল।
ছিল একান্তই একের ভেতর অনেক আপনজন।
মূর্খ সৃষ্টির মত তাই ত্রাস হয়ে ফিরে যাই
তার অথবা তাদের
জৈবিক উর্বরতার জমিনে- বিপন্ন স্বর্ণদেশে।

১৮

অস্তগামী সূর্যের রথে চড়ে
তুমিও নাকি যুবা হবে
অর্বাচীন বৃদ্ধদের কালে?

তোমার কপালের উপর
নিয়মিত ত্রাস ফেরি করে ফেরে
নিহত অবসরের নিকোটিন জীবন;
পথের ধারে পথ
হঠাৎ অস্ত্রধারী হয়ে উঠে অদ্ভুত;
তোমার জংঘা ভর্তি দেবতার আশীর্বাদ
অথচ সাংসারিক জলের ঘাটে
তোমার পাতে এখন কাকতাড়–য়ার শ্বেত কংকাল।
কিলবিল আর্দ্রতার জন্ম দেয়
জাতহারা সব মৃত সন্তান।

১৯

চোখে মুখে ঘুম নেই
বিবশ অন্ধকারের ভেতর করোটিতে ফোঁটে খই
হাড্ডির থালা চাঁটে রক্তের রেজালা;
মৃত হাঙ্গরের মত অর্বাচীন হয়ে উঠি একদা
বুকের ভেতরে বহে শিব ঠাকুরের নৃত্য
আর সম্ভোগের শালীন উন্মাদনা।
উৎসবের ভেতরও বিপন্ন সময়ের অপোয়
বিষণ্ন জীবনের চরকা কাটে আইও দেবীরা…
তবুও ভাবের তত্ত্ব নিয়ে কল্পনায় এগুই
আশালতার প্রেমে দেখি বিষ
থকথকে বমনের বৃত্তে খুঁজি জীবনের যত অর্থময়তা।
স্বপ্নের সেক্সি শরীরে মানবিক ক্রিয়া কৌশল
ভালবাসা কেন যেন যান্ত্রিক, রোবটিক হয়ে আছে…
আমি বিশ্বাসী হতে শিখি, যন্ত্র নির্ভর হতে শিখি
তোমাদের মৃত শহরে
ভালবাসতে শিখি কবরের মত অন্ধকার
জন্ম থেকে মৃত্যু, অন্ধতা থেকে আলো অবধি।
তবুও ঘুম নেই, মৃত্যু নেই
    ফেরাউনের মত ঈশ্বর হয়ে বেঁচে থাকি
    অসংখ্য লাশের ফসিলে…
মরচে পড়া কফিনের গায়ে
তবুও কি তুমি ঠুকবে নি:স্তব্দতার পেরেক
লোকায়ত জীবনের অচল হুলিয়া?

২০

জন্মটা খুব বেশি দিনের নয়
অথচ এরই মাঝে পেরিয়ে এসেছি অনেক
নিহত যৌবন এবং আসন্ন প্রৌঢ়তা;
লিখে ফেলেছি কবিতা ঢেড়
বিষণ্নতার মাঝেও পূর্বজন্মের যত্ত হিসেব
মগজের ভেতর সুপ্রিয়াদের প্রেম।

জন্মটা খুব বেশি দিনের নয়
অথচ কত সহজেই জং ধরে যায়
ঈশ্বরের বিকল মস্তিষ্কে ;
স্নায়ুতে জাগে কালো রক্তের তুফান।

মৃত্যুটা খুব বেশি দিনের নয়
এরই মাঝে রসায়ন পঁচে গেছে ঢেড়
হাড্ডিসার বুকে লৌহের কার্পেট সময়
তবুও লাল লাল ঘাসেদের মুখে
অশরীরি আর্তনাদ জমে।

২১

আজ থেকে আমি মুক্ত
বিস্তীর্ণ আকাশির নীলে একটি শিকারী পাখি
মুমূর্ষ দৃষ্টির গভীরে ঈমান নিয়ে
তোমাকে খুঁজি;

শোন!
আজ থেকে আমার কেবলই ছুটি
হাত বাড়ালেই অবসর;

বাতাসে বৃদ্ধা মৃত্তিকার চিৎকার
অথচ তোমার খোলা চুলের কোন ঘ্রাণ নেই;
মগজের ভেতর কার্তুজ
আর অন্ধ মৌলভীর খোৎবা চলে;

শোন!
আজ থেকে আমার আর কোন ব্যস্ততা নেই;
শুধু কবরের ভেতর জেগে থাকা
একটি লাশের মত নি:সঙ্গতা আছে;

আজ সারাদিন আমার ছুটি
যদি সম্ভব হয় এসো…
নিষ্পাপ কষ্টগুলোকে মাটি চাপা দেব।

Leave a comment

  • কপিলেফ্ট ওয়েব জার্নাল : একটি বিকল্প লিটলম্যাগ Copyleft webjournal : an alternative littlemag

    কপিলেফ্ট। এখানকার যে কোনও লেখা যে কেউ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল লেখা ও লেখককে

    অবিকৃত রেখে প্রকাশ ও প্রচার করতে পারবেন।

    Copyleft: Matters in this site is copyleft. Everybody can reprint or republish this without modifying author and writing and without the permission of author and publisher for only noncommercial purposes